রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

দোকান কর্মচারী থেকে সাততলা বাড়ি ও ছয় ফ্ল্যাটের মালিক 

স্টাফ রিপোর্টার : একই ফ্ল্যাট একাধিক ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণের কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের ৭ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে সিআইডি। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, চক্রের হোতা জয়নাল আবেদীনের প্রধান সহযোগী রাকিব হোসেন (৩৩), জয়নালের ভায়রা কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (৫৪), জাল কাগজপত্র ও এনআইডি প্রস্তুতকারক লিটন মাহমুদ (৪০), ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল প্রস্তুতকারক হাবিবুর রহমান ওরফে মিঠু (৩০), ব্যাংক কর্মকর্তা হিরু মোল্যা (৪৪), আব্দুস সাত্তার (৫৪) ও সৈয়দ তারেক আলী (৫৪)।

এ বিষয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। তিনি বলেন, জয়নাল আবেদীনসহ চারজনকে কয়েকদিন আগে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে আনা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এই সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিআইডি প্রধান বলেন, “জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ, ভূমি রেজিস্ট্রি অফিস এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বিতভাবে প্রতারণার কাজটি করে থাকে।”

মোহাম্মদ আলী মিয়া জানান, চক্রের সদস্যরা একজনের নামে একাধিক এনআইডি, টিআইএন সার্টিফিকেট তৈরি করে। সেসব নথি ব্যবহার করে ফ্ল্যাট বা জমির একাধিক 'মূল' দলিল বানিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বন্ধক রেখে ঋণ নিয়ে থাকে। সিআইডি প্রধান বলেন, চক্রের হোতা জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস এবং তার সহযোগীরা বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট বা জমি কেনার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিস বা ব্যক্তির কাছে গিয়ে তা পছন্দ হয়েছে বলে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বায়না করেন।“এরপর ফ্ল্যাটের মালিকানার তথ্য যাচাইয়ের কথা বলে জমি বা ফ্ল্যাটের দলিল এবং অন্যান্য কাগজপত্রের কপি সংগ্রহ করে সেই দলিল দিয়েই মূল দলিলের অনুরূপ দলিল তৈরি করেন। এরপরেই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন কৌশলে ওই ফ্ল্যাট বা জমির বিপরীতে মোটা অংকের ঋণ মঞ্জুর করায়। পরবর্তীতে সেই ঋণের টাকা তারা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করে।” এভাবে অনেক ফ্ল্যাটের বিপরীতে ঋণ নিয়ে চক্রটি ‘হাওয়া’ হয়ে যাওয়ায় মূল মালিক চরম বিপদে পড়েন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী মিয়া।

রাজধানীর উত্তরা-পূর্ব থানার একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি এ চক্রের সন্ধান পায় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, “চক্রের হোতা জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিসের একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি প্রতারণার মাধ্যমে আয় করা অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন কি না সে ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে।”

জয়নাল মিরপুরে কোঅপারেটিভ মার্কেটের একটি সোনার দোকানের কর্মচারী ছিলেন জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, পরে তিনি ফ্ল্যাট জালিয়াতি শুরু করেন। প্রায় শতকোটি টাকার মালিক জয়নালকে এসব কাজে তার দুই স্ত্রী রোমানা সিদ্দিক ও রাবেয়া আক্তার মুক্তা সহযোগিতা করে থাকেন। “প্রতারণার জন্য জয়নালের নামে ছয়টি সক্রিয় এনআইডি রয়েছে। এসব এনআইডি দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫০টির অধিক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সাততলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট, মিরপুর ও আশকোনায় তিনটি ফ্ল্যাটসহ আরো বেশ কিছু সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।”

সিআইডি প্রধান আরও জানান, জয়নাল আবেদীন এই ধরনের একটি চক্রের প্রধান। তার প্রতিষ্ঠান রুমানা জুয়েলার্স, নীড় এস্টেট প্রোপার্টিজ লিমিটেডসহ ২৫ জন সদস্যের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মানি লন্ডারিং (অর্থপাচার) প্রতিরোধ আইনে মামলা করে সিআইডি। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তার প্রধান সহযোগী রাকিব হোসেন, ভায়রা ভাই কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, জাল কাগজপত্র ও এনআইডি প্রস্তুতকারক লিটন মাহমুদ, ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল প্রস্তুতকারক হাবিবুর রহমান, ব্যাংক কর্মকর্তা হিরু মোল্যা, আবদুস সাত্তার ও সৈয়দ তারেক আলীকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এর আগে এই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখন পর্যন্ত এ মামলা গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১১ জনকে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ